ইউটিউবের ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম কিভাবে পাবো?

ইউটিউব ভিডিও মনিটাইজ করার জন্য ইউটিউব চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। একসময় ইউটিউব মনিটাইজ করে খুব সহজে ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব হত। কিন্তু কালক্রমে ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারনে ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে আয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রেসটিকশন নিয়ে আসছে। এক সময় ছিল যখন ইউটিউবে মাত্র একটি ভিডিও আপলোড করে ইউটিউব চ্যানেল দিয়ে এডসেন্স অনুমোদন করে নেওয়া যেত।
ইউটিউবের ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম কিভাবে পাবো?




আপনি যদি একজন নতুন ইউটিউবার হন, তাহলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম এর মাইল ফলক পুরন করা খুবই জরুরী। কারণ এই লক্ষ্য পুরণ না করা পর্যন্ত আপনি ইউটিউব এর মাধ্যমে অনলাইন হতে টাকা আয় করতে পারবেন না। আপনি একজন ইউটিউবার হয়ে থাকলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য বেশ উপকারে আসবে।




নতুন ইউটিউবারদের অনেকের ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেই। আমরা আজকের পোস্টে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেই সাথে কিভাবে আপনি সহজে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার পুরণ করবেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম এর মানে কি?

অধিকাংশ নতুন ইউটিবার ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এর সঠিক অর্থ বুঝতে পারে না। ইউটিব ২০১৮ সালে বিজ্ঞাপন দাতাদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে এই নিয়মটি চালু করে। ২০১৮ সালের পূর্বে ইউটিউবে এ ধরনের কোন নিয়ম ছিল না। যারা ইউটিউবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তাদের হয়তো এ বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা আছে। কিন্তু যারা নতুন তারা এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে না। 

ইউটিউব ২০১৮ সালে সরাসরি জানিয়ে দেয়, ইউটিউব ভিডিও মনিটািইজ করে এডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা আয় করার জন্য প্রত্যেক ইউটিউবারকে তার চ্যানেলে সর্বশেষ এক বছরের মধ্যে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। অর্থাৎ আজকের দিন থেকে গত ৩৬৫ দিনে আপনার চ্যানেল ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার না থাকলে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মনিটাইজেশন Enable হবে না।
এ বিষয়টির ভীতরে যে সঠিক হিসাব আছে সেই সঠিক হিসাবটি অধিকাংশ নতুন ইউটিউবার মিলাতে পারেন না। সে জন্য অনেকের ইউটিউব চ্যানেলে সর্বমোট ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার হওয়ার পর যখন মনিটাইজ একটিভ হয় না, তখন বিষয়টি না বুঝার কারনে হতাশ হয়। অনেকে আছে যারা বিষয়টি না বুঝার কারনে ইউটিউবকে দুষারুপ করে। আসলে এখানে ইউটিউবের কোন ভূল নেই, ভূল আপনি নিজেই করছেন।

ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম এর হিসাব

এই হিসাবটি সহজভাবে বুঝানোর জন্য আমি একটি গ্রাফ তৈরি করেছি। আশাকরি আপনি গ্রাফটি থেকে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এর সঠিক হিসাব বুঝতে পারবেন। নিচের গ্রাফটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন-
ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম এর হিসাব
উপরের চিত্রে আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে হিসাব শুরু করব। ধরুন, আপনি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে ভিডিও আপলোড করা শুরু করলেন। এ ক্ষেত্রে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত আপনার চ্যানেলে সর্বমোট ১০০০ ঘন্টা ভিডিও ভিউ হল। তারপর এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত আরো ১০০০ ঘন্টা ভিডিও ভিউ হয়। একইভাবে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত আরো ১০০০ ঘন্টা ভিডিও ভিউ হলো। তারপর অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ৫০০ ঘন্টা ভিডিও ভিউ হয়। 

এখন গ্রাফটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো এক বছর সময়ে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সর্বমোট ৩৫০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম হয়েছে। কিন্তু ইউটিউব এর শর্ত অনুসারে এক বছরে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও মনিটাইজ করার অপশন পাবো না। 

তারপর উপরের গ্রাফ অনুসারে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ হতে ২০২১ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে আরো ১০০০ ঘন্টা ভিডিও ভিউ হল। এখন ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ হতে ২০২১ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখের সর্বমোট ভিউ হিসাব করলে ৪৫০০ ঘন্টা হয়। নতুন ইউটিউবার এই জায়গাতে ভুল করে থাকেন। তারা মনেকরে চ্যানেলে ৪০০০ ঘন্টা পূর্ণ হয়েছে, অথচ ইউটিউব ইচ্ছাকৃতভাবে মনিটাইজ Enable করছে না। 

হ্যাঁ, আপনার চ্যানেলে ৪০০০ ঘন্টার বেশি ওয়াচ টাইম রয়েছে। কিন্তু আপনি উপরের গ্রাফটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। এখনে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ হতে ২০২১ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখে সর্বমোট ৪৫০০ ঘন্টা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ হতে ২০২১ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত যে সময়টুকো পার করেছেন, সেটা ১ বছর নয়। সেই সময়টা ১ বছর আরো ৩ মাস, অর্থাৎ আপনি এক বছরে ৪০০০ ঘন্টা পুরন করেননি। ৪০০০ ঘন্টা পুরন করতে আরো তিন মাস বেশি নিয়েছেন। কিন্তু ইউটিউব এর নিয়ম হলো শেষ এক বছরে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ফিলআপ করতে হবে।

এগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে -
এক বছর সময়টাকে সঠিকভাবে মিলানোর জন্য আপনাকে সবসময় আজকের দিনটি হিসাব করতে হবে। আপনাকে সবসময় দেখতে হবে আজকের দিন থেকে গত এক বছরে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে কত ঘন্টা ভিউ হয়েছে। আরো সহজভাবে বললে এভাবে বলা যায় যে, আজকের দিনটি যে মাসের যে তারিখ, গত বছরের ঠিক একই মাসের সেই একই তারিখ হতে আজ অবধি যত ঘন্টা ওয়াচ টাইম হয়েছে, সেটাই হচ্ছে আপনার এক বছরের সর্বমোট ওয়াচ টাইম। আশাকরি এক বছরে ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ও ১০০০ সাবস্ক্রাইবারের বিষয়টি ক্লিয়ার হতে পেরেছেন।

ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরন করার সহজ হিসাব

৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইমকে মিনিটে কনভার্ট করলে সর্বমোট ২,৪০,০০০ মিনিট হয়। এই বিশাল সংখ্যাটি দেখে আপনি হয়ত আরো বেশি অবাক হচ্ছেন। এখানে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। একটি উদাহরনের মাধ্যমে কঠিন বিষয়টিকে আরো সহজ করে দিচ্ছি। যেমন-
  • আপনার চ্যানেল যদি ২,৪০,০০০ টি ভিডিও থাকে এবং প্রতিটি ভিডিও এক মিনিট করে একবার ভিউ হয়, তাহলে পানির মত সহজে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি এটা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
  • আপনার চ্যানেল যদি ২,৪০০ টি ভিডিও থাকে এবং প্রতিটি ভিডিও ১০ মিনিট করে ১০ বার ভিউ হয়, তাহলেও সহজে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ হয়ে যাবে। কিন্তু এটাও অনেক কঠিন কাজ।
  • কিন্তু আপনার চ্যানেল যদি ২৪০ টি ভিডিও থাকে এবং প্রতিটি ভিডিও ১০ মিনিট করে ১০০ বার ভিউ হয়, তাহলেও সহজে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ হয়ে যাবে এবং এই কাজটি চাইলে যেকোন ইউটিউবার সহজে করতে পারবে।
আসলে এগুলোর মাধমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম ফিলআপ করানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এগুলো শুধুমাত্র ধারনা দেওয়ার জন্য আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। কিভাবে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করবেন, এখন আমরা সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম কিভাবে পাবেন?

প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বের সর্বক্ষেত্রে যেমন প্রতিযোগি রয়েছে তেমনি ইউটিউবে এখন তুমুল প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এখন অধিকাংশ লোক যেকোন পেশা ও কাজের পাশাপাশি ইউটিউব হতে টাকা আয় করার জন্য ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করছে। কাজেই ইউটিউবে এখন মেধাবি লোকের অভাব নেই। আপনার কাজের দ্বারাই এখন ইউটিউবে যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে। নিচের কয়েকটি যোগ্যতা থাকলে এবং টিপস অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করতে পারবেন।

১। ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস

প্রথমত ইউটিউবে কাজ করার জন্য আপনার প্রচুর পরিমানে ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। ইউটিউবে কাজ করার জন্য আগ্রহ না থাকলে ইউটিউব হতে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। শুধুমাত্র অন্যের দেখাদেখি টাকা আয়ের লালসা নিয়ে ইউটিউবে কাজ করতে আসলে আপনি কখনো সফল ইউটিউবার হতে পারবেন না।

ইউটিউবে টাকা পয়সা আয়ের কথা ভূলে গিয়ে নিজের দক্ষতা মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য এবং নিজের পরিচয় ঘটানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করলে ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করা কোন বিষয় হবে না। সবসময় আত্মবিশ্বাস রেখে মনে মনে চিন্তা করবেন আমার মত অন্য কেউ পারলে আমি পারব না কেন। আমিও তাদের মত একজন মানুষ। সুতরাং তারা যেটাকে সম্ভব করছে আমার কাছে সেটা অসম্ভব হবে কেন?

২। ধৈর্য ক্ষমতা

একজন সফল ইউটিউবার হওয়ার জন্য আপনার ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ অধিকাংশ নতুন ইউটিউবাররা কিছু দিন কাজ করার পর ভিডিওতে ভিউ না পেয়ে হাপিয়ে উঠে। তখন ভিডিও তৈরি করা ছেড়ে দেয়। ধৈর্য হারা হয়ে ভিডিও আপলোড করা ছেড়ে দিলে আপনার ভিডিও এর ভিউ কমতে থাকবে। অধৈর্য না হয়ে ঠান্ড মাথায় ভিডিও তৈরি করে নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। কারণ অল্প দিনে কেউই ইউটিউবে সফল হতে পারেনি। কাজেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করার জন্য অবশ্যই ধৈর্য ধরে দীর্ঘদিন কাজ করে যেতে হবে।

৩। কনটেন্ট কোয়ালিটি

আমরা যারা অনলাইনে কাজ করি তারা সবাই জানি “কনটেন্ট ইজ কিং”। কিন্তু সেই কিং এর কোয়ালিটি মেনটেইন না করে যেকোন বিষয়ে অভীজ্ঞতা ছাড়া ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে দেই। আপনি যে বিষয় ভালোভাবে জানেন না, সেই বিষয়ে কখনো ভিডিও তৈরি করবেন না। কারণ আপনি যে বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করুন না কেন, সব ধরনের ভিডিও অলরেডি ইউটিউব পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আপনি যে ভিডিও তৈরি করছেন, সেটাতে অন্যের চাইতে ভালোমানের কনটেন্ট না থাকলে ভিউয়াররা শুধু শুধু আপনার ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করবে না। কাজেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যত ভালো কোয়ালিটির কনটেন্ট থাকবে তত সহজে ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ হবে।

এখানে ভালোমানের কোয়ালিটি বলতে আমরা ভিডিও এর ডিজাইন এর কথা বলছি না। যেকোন নরমাল ডিজাইনের ভিডিওতে ভালো সাউন্ড ও কোয়ালিটি কনটেন্ট থাকলেই আপনার ভিডিও ভালোমানের ভিডিও হিসেবে গণ্য হবে। শুধু শুধু ভিডিও এর ডিজাইনের দিকে লক্ষ্য না রেখে ভিডিও এর কনটেন্ট কোয়ালিটির উপর অধিক মনোযোগ দিবেন।

৪। রেগুলারিটি - নিয়মিত ভিডিও আপলোড

আপনার ভিডিও দ্রুত ভাইরাল করার জন্য নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে। বিশেষকরে যাদের চ্যানেল একদম নতুন তারা অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করবেন। আর যাদের চ্যানেলে ২০-৩০ টি ভিডিও আছে তারা প্রতিদিন ভিডিও আপলোড করতে না পারলেও একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে যাবেন।

নিয়মিত ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন এবং ভিউয়ার উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। অনেক ভিউয়ার আছে, যারা আপনার ভিডিও দেখার জন্য নিয়মিত আপনার চ্যানেলে ভিজিট করে। এ ক্ষেত্রে আপনি মাঝে মধ্যে বা কখনো কখনো একটি দুটি ভিডিও আপলোড করলে আপনার চ্যানেলের নিয়মিত দর্শক হারাবেন। তাছাড়া যারা নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে তাদের ইউটিউব চ্যানেলকে গুগল ও ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন অধিক প্রাধান্য দেয়। রেগুলারিটি মেনটেইন করে ভিডিও আপলোড করতে পারলে খুব সহজে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ হয়ে যাবে।

৫। ভিডিও এর এসই করা

ভিডিও দ্রুত সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ভিডিও এর কিছু বেসিক এসইও করতে হয়। ইউটিউব ভিডিও এসইও করার কাজ একটি ব্লগ এসইও করার মত কঠিন নয়। মাত্র অল্প কিছু বেসিক এসইও জেনে নিলে খুব সহজে আপনার ভিডিওগুলো সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অধিক পরিমানে অপটিমাইজ করতে পারবেন। ইউটিউব এসইও বিষয়ে আমাদের ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে। পোস্টটি পড়ে নিলে ইউটিউব এসইও সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আপনার ভিডিও এর এসইও করতে পারবেন।

ইউটিউব ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করার এ্যাডভান্স টিপস

উপরের এই পাঁচটি বিষয় মেনে ইউটিউবে কাজ চালিয়ে গেলে আপনি খুব অল্পদিনে ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করে নিতে সক্ষম হবেন। সেই সাথে নিচের কয়েকটি টিপস ফলো করলে ইউটিউবের মাইল ফলকটিতে পৌছতে আপনার জন্য আরো সহজ হবে।

১। ট্রেন্ডিং টপিক

সমসাময়িক কিছু ট্রেন্ডিং টপিক থাকে যেগুলো সময়ে সময়ে প্রচুর পরিমানে জনপ্রিয় হয়। সেই সকল বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে সবার আগে ইউটিউবে আপলোড করতে পারলে ভিডিওগুলো বেশি পরিমানে ভিউ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ চালাক ইউটিউবাররা এ ধরনের কাজগুলো করে সহজে তাদের ভিডিও এর ভিউ বৃদ্ধি করে নেয়।

যেমন ধরুন- বর্তমানে করোনা ভাইরাস বেশ ট্রেন্ডিং একটি টপিক। লোকজন ইউটিউবে এ বিষয়ে যে ভিডিও পাচ্ছে সেগুলোতে ক্লিক করছে। এ ধরনের সমসাময়িক অনেক বিষয় থাকে যেগুলো নিয়ে ভিডিও তৈরি করে সবার আগে ইউটিউবে আপলোড দিয়ে আপনার ভিডিও এর ওয়াচ টাইম বৃদ্ধি করে নিতে পারেন।
ইউটিউব ট্রেন্ডিং টপিক

২। ফ্যানি ভিডিও

সব শ্রেণীর মানুষ মজা বা আনন্দ করতে পছন্দ করে। আর বর্তমানে ইউটিউবে এই বিষয়টি বেশি ঘটছে। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল আছে এবং টেলিফোন কোম্পানিগুলো কমদামে ডাটা প্যাক দিচ্ছে বিধায় ইউটিউবে ঢুকে যথ ধরনের ফ্যানি ভিডিও পাচ্ছে সেটাই দেখে নিচ্ছে। আপনি কোন ধরনের ফ্যানি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে পারলে খুব অল্পদিনে ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করে নিতে পারবেন।

কোনো সুন্দরি মেয়ে ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আপনার ভালো পরিচয় থাকলে, তাকে নিয়ে দুই চারটি ভিডিও তৈরি করতে পারেন। কারণ সুন্দরি মেয়েদের নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করলে খুব সহজে ভিডিও ভাইরাল হয়। কাজেই ভিডিও এর ওয়াচ টাইম বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের ট্রিকস ফলো করতে পারেন।

৩। বড় ইউটিউবারদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা

আপনার ইউটিউব চ্যানেলের টপিক রিলেটেড বড় বড় ইউটিউব চ্যানেলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে তাদের চ্যানেলের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ও ওয়াচ টাইম বৃদ্ধি করে নিতে পারেন। ভালোমানের চ্যানেলের মালিকের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে, তাকে আপনার চ্যানেলের ভিডিও তার চ্যানেলের ফিচার্স ভিডিওতে লিংক করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। কোন বড় ইউটিউবার আপনার ভিডিও এর একটি লিংক শেয়ার করলে আপনি খুব কম সময়ে ইউটিউব চ্যানেলের ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করে নিতে সক্ষম হবেন।

৪। বড় ইউটিউবারদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করা

ইউটিউবে যে সকল বড় বড় ইউটিউবার রয়েছেন, আপনি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে তাদের বিভিন্ন ভালো দিক তুলে ধরে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। তবে এ ধরনের ভিডিওতে জনপ্রিয় ইউটিউবারদে নিয়ে কোন ধরনের বাজে ভিডিও তৈরি করবেন না। সাধারণত বড় বড় ইউটিউবাররা কি করে, তাদের আয় কত, তাদের লাইফস্ট্যাইল কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। এ ধরনের ভিডিওতে প্রচুর পরিমানে ওয়াচ হয়।

৫। বন্ধুদের মোবাইল থেকে চ্যানেল সার্চ

আপনার যদি খুব বেশি পরিমানে বন্ধু বান্ধব থাকে, তাহলে আপনি তাদেরকে আপনার চ্যানেলটি ইউটিউবে সার্চ করার জন্য বলতে পারেন। তবে একটি মোবাইল বা একটি কম্পিউটার দিয়ে বার বার ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকবেন। আপনার বন্ধুরা মাঝে মধ্যে আপনার চ্যানেলটি সার্চ করলে ইউটিউব সেটাকে অর্গানিক সার্চ হিসেবে ধরে নিয়ে আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলো র্যাংক করবে।

৬। ভিডিও Playlists তৈরি করা

আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যতগুলো এক ক্যাটারির ভিডিও রয়েছে সেগুলোকে ক্যাটাগরি অনুসারে এক একটি Playlists তৈরি করতে পারেন। আলাদা আলাদা Playlists তৈরি করার ফলে ভিজিটররা সহজে আপনার ইউটিউব চ্যানেল হতে তাদের প্রয়োজনীয় সকল ভিডিও দেখতে পারবে। এই ট্রিক্সটি আপনার ভিডিও এর ওয়াচ টাইম বৃদ্ধিতে বেশ হেল্পফুল হবে।
ইউটিউব ভিডিও Playlists তৈরি করা

৭। ভিডিওতে আই বাটন ও কার্ড যুক্ত করা

আপনি যখনি কোন নতুন ভিডিও আপলোড করবেন, তখন এর সাথে সম্পৃক্ত অন্য ভিডিও এর লিংক যুক্ত করে দিতে পারেন। সেই সাথে ভিডিও তৈরি করার সময় অন্য ভিডিওটি আই বাটনে ক্লিক করে দেখে নেওয়ার জন্য ভিউয়ারদের বলতে পারেন। এ কাজটি একটি ভিডিও এর মাধ্যমে আরেকটি ভিডিওতে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
ইউটিউব ভিডিওতে আই বাটন ও কার্ড যুক্ত করা

৮। সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার

একটি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করার পর যত দ্রুত সম্ভব সেটিকে ফেসবুক, টুইটার, মেসেজ্ঞার সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। আপনার ভিডিওটি যত বেশি পারিমানে শেয়ার করবেন, ভিডিও এর ওয়াচ টাইম তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।

৯। কমেন্টে হেস ট্যাগ ব্যবহার

নতুন ইউটিউবার বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও এর কমেন্ট সেকশনে তাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব বা কোন ভিডিও এর লিংক শেয়ার করে সেটি দেখে নেওয়ার আহ্বান জানায়। আপনি এ ধরনের কাজ কখনো করতে যাবেন না। কারণ ইউটিউব এ ধরনের কমেন্টগুলোকে স্প্যামিং কমেন্ট হিসেবে ফিল্টার করে নেয়। আপনার ভিডিও রিলেটেড অন্যান্য চ্যানেলের বিভিন্ন ভিডিও এর কমেন্ট সেকশনে আপনার ভিডিও এর কোন হ্যাস ট্যাগ যুক্ত করে দিতে পারেন। এতেকরে কেউ সেই হ্যাস ট্যাগে ক্লিক করলে সার্চ রেজাল্টে আপনার ভিডিও শো হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

১০। গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে ভিডিও প্রমোট

গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার চ্যানেলটি মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য ভিডিও বুস্ট বা প্রমোট করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক বড় অংকের টাকা ব্যয় করতে হবে। কারণ গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল প্রতিটি ভিউ এর জন্য মিনিমাম ২ টাকা করে চার্জ করবে। এ ক্ষেত্রে ৫ হাজার ভিউয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ৫০ হাজার ভিউয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা খরছ হতে পারে।

আসলে এগুলো সবার দ্বারা সম্ভব নয়। সাধারণত এ ধরনের প্রমোট নামিদামি কোম্পানি করে থাকে। তবে আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেলে দ্রুত ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করে নিতে চান এবং টাকা ব্যয় করার মত সামর্থ থাকে, তাহলে গুগল এডওয়ার্ডের মাধমে আপনার ইউটিউব চ্যানেল প্রমোট করতে পারেন।

শেষ কথা

উপরের সবগুলো বিষয় ভালোভাবে অনুসরণ করে ইউটিবে কাজ চালিয়ে গেলে আমার বিশ্বাস যে, একজন ইউটিউবার মাত্র ৪-৬ মাসের মধ্যে তার ইউটিউব চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পুরণ করে নিতে সক্ষম হবে। ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ধারণ, কনটেন্ট কোয়ালিটি এবং রেগুলারিটি মেনটেইন করে ইউটিউবে কাজ করে গেলে আপনি খুব অল্পদিনে একজন সফল ইউটিউবার হয়ে উঠতে পারবেন।
Next Post Previous Post
9 Comments
  • Saifur Rahman
    Saifur Rahman May 14, 2020 at 6:00 PM

    Nice Post

    • Rashid
      Rashid May 15, 2020 at 1:48 AM

      Thanks...

    • Anonymous
      Anonymous September 5, 2021 at 8:43 AM

      আচ্ছা স্যার আমার ওয়াচ টাইম কি ভাবে চেক করব?

    • Rashid
      Rashid September 5, 2021 at 4:27 PM

      ইউটিউব ড্যাশবোর্ড থেকে চেক করতে পারবেন।

  • পিয়নমামা ডটকম (PeonMama)
    পিয়নমামা ডটকম (PeonMama) July 19, 2020 at 5:30 PM

    ভাইয়া অনেকের দেখি একাধিক ইউটউব চ্যানেল। জানার বিষয় ছিলোঃ একাধিক জনপ্রিয় ইউটউব চ্যানেল থাকলে একাধিকভঅবে এডসেন্স নেওয়া যাবে কি? তথাপি যে মেইল দ্বারা ইউটউব চ্যানেল খোলা হয় সেখানে পরবর্তীতে তার মালিকানা/ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে কি?

    • Rashid
      Rashid July 19, 2020 at 7:41 PM

      একাধিক একাউন্ট না নেওয়ার জন্য এডসেন্স টিম পরামর্শ দেয়। সাধারণত ইউটিউব এডসেন্স একাউন্ট এর ক্ষেত্রে যতগুলো ইউটিউব চ্যানেল থাকুক না কেন, সবগুলো চ্যানেল একটি এডসেন্স একাউন্ট এর অধিনে থাকে।

      ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন না করাই ভাল। কারণ ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন করলে Invalid activities এর কারনে এডসেন্স একাউন্ট ব্যান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিকন্তু এডসেন্স একাউন্ট ক্রয় বিক্রয় করা এডসেন্স পলিসির মধ্যে পড়ে না।

      আশাকরি আপনি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ...

  • Afia's Writing Globe
    Afia's Writing Globe September 27, 2021 at 5:30 AM

    অনেককিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

Add Comment
comment url