গুগল কি?
আপনি কি সঠিকভাবে বলতে পারবেন গুগল কি? আমরা যদি ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বের
ইন্টারনেটের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখবো সেই সময় ইন্টারনেট ছিল কিন্তু বর্তমান
সময়ের মত ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না বা ইন্টারনেট থেকে বর্তমান সময়ের
মত কোন কিছু সার্চ করে তথ্য পাওয়া যেতো না। এক মাত্র গুগল সার্চ ইঞ্জিনের কল্যানে
আমরা আজ ইন্টারনেটে সার্চ করে যে কোন বিষয় জানতে পারি।
আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে মানুষ ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন হলে
ওয়েবসাইটের এড্রেস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হতো। কারণ সেই সময় কোন ধরনের
সার্চ ইঞ্জিন ছিল না। ব্যপারটা এমন ছিল যে, কোন তথ্য জানার জন্য একটি বইয়ের পাতা
উল্টে উল্টে যেভাবে কোন কিছু জেনে নেওয়া হতো ঠিক তেমনি সেই সময় ওয়বসাইটের প্রতিটি
পোস্ট ঘেটে ঘেটে তথ্য বের করতে হতো।
একটি কথা চিন্তা করে দেখুন, আপনার যদি কোন কিছু জানার প্রয়োজন হয় আর আপনাকে সেটা
বিভিন্ন ওয়েবসাইটের এড্রেস জেনে নিয়ে তারপর প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি
পোস্ট যাচাই করে তারপর তথ্য জেনে নেওয়া লাগতো তাহলে কেমনটা হতো? এই ধরনের
অবস্থাকে অনেকটা মরুভূমিতে সুই খোঁজার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
অথচ গুগল আজ আমাদের জীবনকে কত সহজ করে দিয়েছে। যে কোন বিষয়ে আপনার যদি হুট করে
জানার আগ্রহ হয় আর হাতের স্মার্টফোনে ইন্টারনেট কানেকশন থাকে তাহলে আপনি মুহুর্তে
গুগলে সার্চ করে আপনার কাঙ্খিত বিষয়ে জেনে নিতে পারছেন। তাছাড়া গুগল সার্চ
ইঞ্জিনের বিশেষত্ব হচ্ছে গুগল আপনাকে যে কোন বিষয়ে সবচাইতে বেটার সাজেশন্স দিবে
যেটা আপনি ১০ জন মানুষের নিকট থেকেও সাজেশন্স পেতেন না।
এগুলো পড়তে পারেন—
তাছাড়া ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে গুগল আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
বর্তমানে শুধুমাত্র গুগলকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অধিকাংশ ডিজিটাল মার্কেটিং
পরিচালিত হচ্ছে। কারণ অনলাইন থেকে কোন কিছু ক্রয় করার ক্ষেত্রে একজন ক্রেতা
প্রথমে গুগলে সার্চ করে যে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে জেনে নিয়ে তার পর অনলাইন থেকে
কিনে। কাজেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও গুগলের কল্যান অনস্বীকার্য্য।
গুগল কি?
গুগল হচ্ছে একটি আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল পাবলিক কোম্পানি যেটি ইন্টারনেট সার্চ,
ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন সিস্টেমের ব্যবসা করে। শুরুর দিকে গুগল
শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু কালক্রমে গুগল একটি
বহু জাতিক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমান সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম ও তুমুল জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে গুগল। আপনি যদি
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কোন কিছু লিখে সার্চ করেন তাহলে অবশ্যই সেটা পেয়ে যাবেন। আমরা
সার্চ করে খুব সহজে তথ্য পেয়ে যাই কিন্তু কিভাবে এত নির্ভূল ও বেটার তথ্য গুগল
আমাদের শো করে সেটা আমরা কখনো চিন্তা করে দেখি না। কিন্তু গুগল আমাদেরকে তথ্য
প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রোগ্রামিং টেকনোলজি ব্যবহার করে।
গুগল সার্চ ইঞ্জিন ছাড়াও গুগলে আরো অনেক ধরনের সার্ভিস রয়েছে। বিশেষকরে গুগলের
অন্যান্য সার্ভিসের মধ্যে YouTube হচ্ছে অন্যতম। তাছাড়া ক্লাউড কম্পিউটিং হিসেবে
Google Drive হচ্ছে গুগলের অন্যতম একটি সার্ভিস। এছাড়াও Google Play Store,
Google Chrome, Android Operating System সহ আরও অনেকগুলো গুগলের নিজেস্ব সার্ভিস
রয়েছে।
২০১৬ সালে গুগল মোবাইল বিজনেসে পা রাখে। যার ফলে তারা ২০১৬ সালে Google Pixel
নামে একটি মোবাইল লঞ্চ করে যেটি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি মোবাইল হিসেবে
গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। এ ধরনের অনেক ডিজিটাল প্রোডাক্ট সহ বর্তমানে প্রায় শতাধিক
ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভিস গুগলের রয়েছে।
আপনি যদি গুগল এর বাৎসরিক ইনকামের অঙ্ক জানেন তাহলে রিতিমত অবাক হবেন। গুগল এর
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে তারা প্রতিদিন গড়ে ১০০ মিলিয়নের বেশি ইউএসড ডলার ইনকাম
করে। আপনি এই সংখ্যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে দাড়াবে ৮ শত কোটি ৯২ লক্ষ টাকার
বেশি। সেই হিসেবে বাৎসরিক ইনকামের ফিগারটা আপনি নিজেই হিসেবে করে বের করে দেখুন
কি পরিমান বড় অংকের হবে?
গুগল এর পূর্ণরূপ কি?
Google এর Full form হচ্ছে GLOBAL ORGANIZATION OF ORIENTED GROUP LANGUAGE OF
EARTH. যার বাংলা অর্থ দাড়ায় “পৃথিবীর প্রাচ্যিক গ্রুপের ভাষার সংগঠন”।
কিভাবে গুগল নামকরণ করা হয়?
এডওয়ার্ড ক্যাসনার এবং জেমস নিউম্যানের গণিত ও কল্পনা বইয়ের Googol শব্দ দ্বারা
অনুপ্রাণিত হয়ে ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রায়ান তাদের সার্চ ইঞ্জিনের নাম বেছে
নিয়েছিলেন Google হিসেবে। গুগল মানে ১ এর পিছনে ১০০ টি শূণ্য। যার জন্য গুগল
সার্চ ইঞ্জিনে গুগল নামের পাশে অনেকগুলো শূণ্য শো হয়।
Google কে আবিষ্কার করেন?
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ নামক
দুই জন শিক্ষার্থী মিলে ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম গুগল সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন। সেই
হিসেবে সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজ-কে গুগল এর প্রতিষ্ঠাতা বা গুগল এর আবিষ্কার
বলা হয়।
গুগল এর জনক কে?
গুগল এর জনক হলেন “ল্যারি পেজ” এবং “সার্জি ব্রিন”। সর্বপ্রথম তারা ভার্সিটিতে
পড়ার সময় গুগল নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছিল। বর্তমানে এটি বিশ্বের বৃহত্তম
একটি কোম্পানি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।
গুগল প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার শহরের মেনলো পার্কে গুগল
প্রতিষ্ঠিত হয়। ”গুগল প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে” লিখে গুগলে সার্চ করলে গুগল নিজেই
বলে দেয় যে, গুগল ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। নিচের চিত্রে দেখুন—
গুগল এর সিইও কে?
গুগলের বর্তমান সিইও হলেন “সুন্দর পিচাই” যিনি একজন ভারতীয় বংশোদূত। এটা ভারত সহ
পুরো এশিয়া মহাদেশের গর্ব যে, একজন ভারতীয় নাগরিক হলেন বিশ্ববিখ্যাত ইন্টারনেট
সংস্থা গুগলের সিইও। আপনি জেনে কিছুটা অবাক হবেন যে গুগললের সিইও সুন্দর পিচাই
প্রতি বছর ১৩ শত কোটি টাকা বেতন পান।
গুগল কোন দেশের সংস্থা?
এই প্রশ্নটি প্রায়শই মানুষের মনে আসে। গুগল ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত একটি
মার্কিন সংস্থা। একই সাথে গুগলের শাখাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে রয়েছে।
বিশেষকরে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও গুগলের শাখা অফিস রয়েছে। তাছাড়া গুগল
সিঙ্গাপুর থেকে এশিয়া মহাদেশের সকল কাজ পরিচালনা করে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ
গুগলের অফিস হবে বলে আমরা আশা করছি।
গুগলের প্রতিষ্ঠাদের কার শেয়ার বেশি?
গুগলের প্রতিষ্ঠাদের মধ্যে অনেকের বিভিন্ন অংকের শেয়ার রয়েছে। কিন্তু সকলের
শেয়ারের অংশ আমাদের পক্ষে আপনাকে জানানো সম্ভব হবে না। সেই জন্য বিশেষ তিন জন
ব্যক্তির শেয়ারের তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
- Larry Page – 27.4%
- Sergey Brin – 26.9%
- Eric Schmidt – 5.5%
গুগল বাংলা কি?
গুগল বাংলা হল গুগলের একটি বাংলা সংস্করণ। শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষিদেরকে বাংলা
ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য গুগল বাংলা চালু করে। বাংলায় সার্চ করার জন্য Google.com.bd
নামে একটি ডোমেইন রেখেছে। সাধারণত আমরা যখন বাংলা ভাষায় কোন কিছু সার্চ করে গুগল
তখন গুগল বাংলা থেকে ফলাফল দেখায়। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি দেশের জন্য গুগলের আলাদা
আলাদা সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে।
গুগল এর ইতিহাস
আজকের দিনে গুগল একটি বিলিয়-ট্রিলিয়নার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে সকলের
কাছে পরিচিত। গুগল এর জনপ্রিয়তার কারণে Google শব্দটি বিশ্ববিখ্যাত Oxford
Dictionary তে স্থান করে নিয়েছে। গুগল শব্দটি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে একটি Verb
হিসেবে অখ্যায়িত করা হয়েছে।
১৯৯৬ সালে সের্গেই ব্রিন এবং
ল্যারি পেজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে PHD করছিলেন তখন তারা তাদের গুগল সার্চ ইঞ্জিন
নিয়ে অন্যান্য ওয়েবসাইটের তুলনায় ভিন্ন কিছু করার চিন্তা ভাবনা করেন। সেই চিন্তা
ভাবনা থেকে তারা র্যাংকিং বিষয়টি নিয়ে আসে। তারা মনে করে অন্য ওয়েবসাইটের ডেটা
কালেকশন করে তারা যদি বিশ্বের সকল ওয়েবসাইটের কনটেন্ট অনুসারে র্যাংক করে
মানুষকে তথ্য দিতে পারে তাহলে ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজে পাওয়া সহজ হবে এবং তাদের
ওয়েবসাইট অন্যান্য ওয়েবসাইটের তুলনায় জনপ্রিয় হবে।
সেই চিন্তা ভাবনা থেকে তারা বিশ্বের সকল ওয়েবসাইটের তথ্য কালেক্ট করার সফটওয়্যার
আবিষ্কার করে তাদের সার্চ ইঞ্জিনের সাথে যুক্ত করে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৯৫ বা
১৯৯৬ সালে বর্তমান সময়ের মত খুব বেশি পরিমানে ব্লগ এবং ওয়েবসাইট ছিল না। যার জন্য
তাদের দুজনের পক্ষে অন্যান্য ওয়েবসাইটের তথ্য সংগ্রহন করা খুব কষ্টসাধ্য ছিল না।
আর বর্তামানে গুগল যে পদ্ধতিতে তথ্য কালেক্ট করে সেটা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি
পেজ পদ্ধতির একটি অংশ।
১৯৯৭ সালে গুগল তাদের নাম "Googol"
থেকে পরিবর্তন করে "Google" নামকরণ করে। বাস্তবিক অর্থে "Google" নামে কোন শব্দ
নেই এবং গুগল শব্দের নির্ধারিত বা সুনির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই। সেই জন্য গুগল তাদের
নামের অর্থ হিসেবে বলে ১ এর পিছনে ১০০ টি শূণ্য। আসলে এটাকে বিশ্লেণ করলে
সুনির্দিষ্ট বা অর্থবহুল কোন কিছু পাওয়া যায় না।
১৯৯৮ সালে গুগল সর্বপ্রথম তাদের
হোম পেজে Doodle যুক্ত করে। কিন্তু বর্তমানে গুগলের প্রায় ২০০০ এর বেশি Google
Doodle রয়েছে। শুধুমাত্র বিভিন্ন ডিজাইনের Google Doodle তৈরি করার জন্য গুগল
Doodle নামে তাদের একটি আলাদা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। সেই ডিপার্টমেন্ট শুধুমাত্র
পুরো বিশ্বের Google Doodle নিয়ে কাজ করে। যার কারনে আমরা বিভিন্ন সময় গুগলের
হোমপেজে বিভিন্ন ধরনের Doodle দেখতে পাই।
২০০০ সালে গুগল AdWords চালু করে।
এখন গুগল এডওয়ার্ড হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপনি সংস্থা। গুগল
এডওয়ার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞান টাকার
বিনিময়ে গুগলের কাছে জমা দেয়। গুগল সেগুলো Text, Image ও Video আকারে বিশ্বের সকল
ওয়েবসাইট, ব্লগ ও ইউটিউব ভিডিওতে শো করে।
২০০৪ সালে গুগল তাদের ইমেইল
সার্ভিস হিসেবে Gmail লঞ্চ করে। সেই সময় জিমেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব অল্প
পরিমানে সুবিধা দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে অনলাইন প্লটফর্মে যত মেইল সার্ভিস
রয়েছে তাদের মধ্যে জিমেইল সবচাইতে বেশি সুবিদা দিচ্ছে। যার জন্য এখন ইমেইল আদান
প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ Gmail ব্যবহার করে।
২০০৫ সালে Google Map নির্মাতা
কোম্পানি কিহোল এর নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গুগল ম্যাপ কিনে নেয়।
বর্তমানে গুগল ম্যাপ প্রচুর পরিমানে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনকার গুগল ম্যাপ ব্যবহার
করে 360 ডিগ্রি এ্যাংগেলে যে কোন স্থানের চারপাশ দেখা যায়।
২০০৬ সালে বর্তমান জনপ্রিয় ভিডিও
শেয়ারিং সাইট YouTube বিশাল এমাউন্টের বিনিময়ে গুগল কিনে নিয়েছিল। বর্তমানে
ইউটিউব গুগল এর পর সবচাইতে বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে স্বিকৃতি পেয়েছে।
তাছাড়া ভিডিও শেয়ারিং সাইট হচ্ছে ইউটিউব হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয়
প্লাটফর্ম। বর্তমানে প্রতি মিনিটে প্রায় ৬০ ঘন্টারও বেশি সময়ের ভিডিও আপলোড করা
হচ্ছে।
২০০৭ সালে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম
এন্ড্রয়েডকে গুগল ক্রয় করে। যেখানে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের প্রায় ৯০ শতাংশ
মার্কেট গুগল এন্ড্রয়েড দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া একমাত্র এন্ড্রয়েড হচ্ছে বিশ্বের
সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম।
২০০৮ সালে গুগল অফিসিয়ালিভাবে
তাদের নিজেস্ব ইন্টারনেট ব্রাউজার সফটওয়্যার লঞ্চ করে। Google Chrome ব্রাউজার
হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্রাউজার সফটওয়্যার। গুগল ক্রোম
বর্তমান মার্কেটের প্রায় ৬৫% এর বেশি জায়গা একাই দখল করে নিয়েছে।
২০১১ সালে ল্যারি পেজ গুগলের নতুন
সিইও হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি গুগল Alphabet এর প্রধান নির্বাহি
কর্মকর্তা। তাছাড়া ২০১১ সালে গুগল তাদের সোশ্যাল মিডিয়া Google+ চালু করে। কিন্তু
Google+ ব্যবসা সফল হতে না পারায় ২০১৯ সালে বন্ধ করে দেয়।
২০১২ সালে গুগল এন্ড্রয়েড এর উন্নত
সংস্করণ 4.1 Jelly Bean লঞ্চ করে। আপনি হয়ত জানেন যে, Jelly Bean লঞ্চ হওয়ার পর
থেকে এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সবার নজরে আসে। সেই বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের জুলাই
মাসে Google Now এবং Google Voice Search ফিচার্স চালু করে, বর্তমানে এটি Google
Assistant হিসেবে সবাই জানি।
২০১৩ সালে গুগল গ্লাস ব্যবসা শুরু
করে। মানুষের পরিহিত চশমার মধ্যে বিভিন্ন উন্নত মানের টেকনোলজি যুক্ত করার
মাধ্যমে গুগল চশমার মধ্যে এক ধরনের আমুল পরিবর্তন আনে। গুগল চশমা লঞ্চ হওয়ার পর
মানুষ এ ধরনের চশমা প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করে।
২০১৫ সালে গুগল VR হেড সেট শুরু
করেছিল। এটি এমন এক ধরনের টেকনোলজি যার মাধ্যমে মানুষ তার চোখের গ্লাসের মত
ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের 3D টেকনোলজির ভিডিও দেখতে পারে। এটি মানুষের হাতের
মধ্যে ভিডিও জগতের এক বিশাল উন্নতি ঘটায়।
২০১৬ সালে গুগল Loon প্রকল্প চালু
করে। এ প্রকল্পের কাজ ছিল যে সমস্ত দেশ এ এলাকায় ইন্টারনেটে পৌছেনি সেই সমস্ত দেশ
ও এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌছানো। একই বছরে গুগল হোম ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস চালু
করে। যার কাজ ছিল প্রশ্নের মাধ্যমে যে কোন কোন কিছু গুগলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া।
২০১৭ সালে গুগল সর্বপ্রথম
Artificial Intelligent (AI) টেকনোলজি চালু করে। যার মাধ্যম গুগল তাদের সার্চ
ইঞ্জিন আরো অনেক উন্নত রূপ দেওয়া জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। তাছাড়া
সেই একই বছরে গুগল Lens লঞ্চ করে, যার মাধ্যমে যে কোন কিছুর ছবি তুলে সরাসরি গুগল
সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করা সম্ভব হয়।
২০১৮ সাল থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত
গুগল আরো স্মার্ট ও বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ও টেকনোলজি
আবিষ্কার করছে। বিশেষকরে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তির প্রশ্নের
জবাব শতভাগ সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য নিয়মিত নিত্য নতুন প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে
যাচ্ছে। ধারনা করা যায় গুগল আগামী কয়েক বছরে টেকনোলজি জগতের একটি অকল্পনিয় বিপ্লব
ঘটাবে।
গুগলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কি কি?
গুগলের অসংখ্য অসংখ্য প্রোডাক্ট ও সার্ভিস রয়েছে যেগুলো নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা
যাবে না। কাজেই এখানে আমরা গুগলের সকল ধরনের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে আলোচনা
করতে পারব না। তবে সবচাইতে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি গুগল প্রোডাক্ট ও
সার্ভিস নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব।
১. গুগল সার্চ ইঞ্জিন
গুগলে আমরা যে সমস্ত তথ্য খোজার জন্য ব্যবহার করি সেটিই হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন।
সর্বপ্রথম গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে
কালক্রমে সার্চ ইঞ্জিনের উন্নতির সাথে সাথে গুগল তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও
সার্ভিসের ব্যবসা শুরু করে।
২. এন্ড্রয়েড
আপনি হয়তো জানেন না যে, আপনার হাতে ব্যবহৃত এন্ড্রয়েড ফোনে যে অপারেটিং সিস্টেম
ব্যবহার হচ্ছে সেই এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মালিক হচ্ছে গুগল। আপনি জেনে
অবাক হবেন, বর্তমানে মার্কেটে ব্যবহৃত ফোনের মধ্যে প্রায় ৯০% স্মার্টফোন হচ্ছে
এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত।
৩. গুগল ক্রোম
ইন্টারনেট ব্যবহার করে অথচ Google Chrome ইন্টারনেট ব্রাউজার চিনে না এমন লোকের
সংখ্যা খুব কম আছে। বর্তমান মার্কেটে যতগুলো ইন্টারনেট ব্রাউজার আছে তার প্রায়
৬৫% এর বেশি মার্কেট গুগল ক্রোম একাই দখল করে নিয়েছে। গুগল ক্রোম কম্পিউটার,
এন্ড্রয়েড ও আইফোনে ব্যবহার করা যায়।
৪. ব্লগার
ব্লগারে সম্পূর্ণ ফ্রিতে একটি নিজের
ব্লগ তৈরি করা
যায়। ব্লগার হচ্ছে একটি কনটেন্ট ম্যানেজিং সফটওয়্যার যেখানে আপনি একটি ব্লগ তৈরি
করে আপনার লেখা শেয়ার করতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, আমাদের ব্লগটি গুগল ব্লগার দিয়ে
তৈরি করা হয়েছে। গুগল ব্লগার দিয়ে কিভাবে একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে
আমাদের ব্লগে একটি পূর্ণাঙ্গ পোস্ট দেওয়া আছে। আপনি চাইলে সেই পোষ্টটি পড়ে
বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন এবং একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করতে পারবেন।
৫. Chrome OS
গুগলের নির্ধারিত কিছু ল্যাপটপ রয়েছে যেটাকে গুগল ক্রোমবুক হিসেবে নাম দিয়েছে। এ
ধরনের কম্পিউটার ও ল্যাপটপের জন্য Chrome অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।
৬. Gmail
Gmail হচ্ছে গুগল এর একটি ইলেকট্রনিক মেইল সার্ভিস। জিমেইল ব্যবহার করে খুব সহজে
বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যে কোন ইলেকট্রনিক বার্তা প্রেরণ করা যায়।
উল্লেখ্য, জিমেইল এর জনপ্রিয়তা এত বেশি, যার কারনে এখন মানুষ ইমেইল বলতেই
জিমেইলকে ধরে নেয়।
৭. ChromeCast
Chromecast এর মাধ্যমে যে কোন ধরনের Movie, Music সহ আরো বিভিন্ন ধরনের ভিডিও
সরাসরি ফোন ও টেলিভিশনে Stream করা যায়। এটি এখনো খুব বেশি জনপ্রিয় হতে পারেনি।
৮. Google Pay
Google Pay হচ্ছে আমাদের দেশের ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং “বিকাশ ও নগদ” এর মত।
কিন্তু Google Pay এবং বিকাশ এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে গুগল পে এর মাধ্যমে বিশ্বের
অধিকাংশ দেশের অনলাইন প্রোডাক্ট এর বিল পেমেন্ট করা যায়, যেটা বিকাশ ও নগদের
মাধ্যমে করা যায় না। তবে আমাদের দেশে এখনো Google Pay সার্ভিসটি চালু হয়নি।
৯. Google Book
এখানে আপনি পিডিএফ ফরমেটে বিশ্বের জনপ্রিয় লক্ষ লক্ষ বই পাবেন। যেগুলো অধিকাংশ
বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি চাইলে গুগল বুক থেকে বই কিনেও পড়তে পারবেন।
১০. Google Calendar
গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে আপনি প্রতিদিনের ইভেন্টগুলো করে রাখতে পারবেন।
বিশেষকরে আপনি কারও সাথে কখন সাক্ষাত করতে চান ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় তারিখ
অনুসারে সেভ করতে পারবেন।
১১. Google Contacts
গুগল কনটাক্ট গুগলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সার্ভিস। কারণ আপনার মোবাইলে সেভ করা
ফোন নাম্বারগুলো সরাসরি মোবাইলে সেভ না করে গুগলে কন্টাকে সেভ করে রাখলে ফোন
নাম্বার ডিলিট হওয়ার ভয় থাকে না। কারণ আপনার মোবাইল থেকে কোন নাম্বার মুছে গেলেও
তা আপনি গুগল কন্টাক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন।
১২. Google Docs
এটাও গুগলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোডাক্ট। গুগল ডক মাইক্রোসফট অফিসের মত কাজ
করে। তবে মাইক্রোসফটের মত গুগল ডক টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। এটা সম্পূর্ণ ফ্রিতে
ব্যবহার করা যায়।
১৩. Google Drive
গুগল ড্রাইভ হচ্ছে গুগলের একটি ক্লাউড কম্পিউটিং। গুগল ড্রাইভ সাধারণত ১৫ জিবি
পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্রি স্পেস দেয় যেখানে আপনার প্রয়োজনীয় যেকোন ফাইল আপলোড করে
রাখতে পারবেন।
১৪. Google Earth
গুগল Earth এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে বিশ্বের যেকোন জায়গার সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এটিও কম্পিউটার ও মোবাইল ভার্সন রয়েছে। গুগল আর্থ পুরো বিশ্বকে মানুষের হাতের
মুঠোও এনে দিয়েছে।
১৫. Google Image
গুগল ইমেজ হচ্ছে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের একটি অংশ। আপনি যেভাবে গুগলে কোন তথ্য সার্চ
করেন, ঠিক সেই সাথে যে কোন ছবিও গুগল ইমেইজে সার্চ করতে পারবেন। গুগল ইমেইজে কোটি
কোটি ছবি রয়েছে।
১৬. Google Keep
এতে আপনি নোট, তালিকাগুলো এবং ভয়েস মেমোর মতো আপনার চিন্তাভাবনা রাখতে পারেন এবং
এটিকে যে কোনও জায়গা থেকে প্রেরণ করতে পারবেন এবং অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
১৭. Google Map
এটি এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন যাতে আপনি সহজেই যে কোনও জায়গার সন্ধান করতে পারবেন
এবং আপনি যাওয়ার উপায়ও খুঁজে পেতে পারেন। এখন রাস্তারঘাট চেনার ক্ষেত্রে গুগল
ম্যাপ সবাই ব্যবহার করে।
১৮. Google Ads
সাধারণত গুগল এডস এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন গুগলের
কাছে টাকার বিনিময়ে জমা দেয়। তারপর গুগল সেগুলো গুগল এডস এর মাধ্যমে পুরো বিশ্বে
প্রচার করে।
১৯. Google AdSense
এটা এমন একটি সার্ভিস যার মাধ্যমে একজন ব্লগার ও ইউটিউবার তাদের ব্লগ ও ভিডিওতে
বিজ্ঞাপন শো করার মাধ্যমে গুগল থেকে টাকা ইনকাম করতে পারে। আপনার যদি একটি ইউটিউব
চ্যানেল বা একটি ব্লগ থাকে তাহলে আপনি নিজেও গুগল এডসেন্স থেকে টাকা ইনকাম করতে
পারবেন।
২০. Google Analytic
যাদের ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইট আছে তারা সাধারণত তাদের ব্লগে গুগল সার্চ ইঞ্জিন সহ
অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে কি পরিমান ট্রাফিক আসছে এবং কিভাবে ট্রাফিক আসছে
ইত্যাদি সহ ওয়েবসাইটের আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানার গুগল এনালাইটিক ব্যবহার করে।
এটিও গুগলের একটি ফ্রি সার্ভিস।
২১. Google My Business
আপনার যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে আপনি Google My Business এর মাধ্যমে
আপনার ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য গুগলের কাছে সাবমিট করতে পারবেন। সেই তথ্য গুগল তার
সার্চ ইঞ্জিনে শো করার মাধ্যমে আপনার ব্যবসার তথ্য মানুষের কাছে পৌছে দিবে।
২২. Google Wifi
আপনার বাড়িতে যদি Wifi ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি চাইলে গুগল ওয়াইফাই ব্যবহার
করে আপনার ওয়াইফাই সিগন্যাল শক্তিশালি করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত
রাউটার প্রয়োজন হবে।
২৩. Google Now
যাতে আপনি গুগলে আপনার মতো যে কোনও তথ্য সহজেই গুগলে সার্চ করতে পারেন এবং এটি
আপনি যা অনুসন্ধান করেন সে সম্পর্কিত তথ্য দেয়।
২৪. Google Photo
এটি এমন এক অনলাইন স্থান যেখানে আপনি ফটো, ভিডিও রাখতে পারেন। আপনি যখনই চান
ডাউনলোড করতে পারেন। সম্প্রতি গুগল ফটো এর ফ্রি সার্ভিস বন্ধ করে পেইড ভার্সন
চালু করেছে।
২৫. Google Duo
এটি একটি স্মার্ট ভিডিও কলিং অ্যাপ্লিকেশন যাতে আপনি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস
প্ল্যাটফর্মে উচ্চমানের ভিডিও কলিং করতে পারেন। ভিডিও কল করার জন্য আমি সর্বদাই
এই এপটি ব্যবহার করি।
২৬. Google Wear OS
হাতের ঘড়ি ও Smart Band এর জন্য গুগল এক ধরনের আলাদা অপারেটিং সিস্টেম রেখেছে। এই
ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ঘড়ি আপনাকে চলাফেরা থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল
রুটিন সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে।
২৭. Google Translate
Google Translate এর মাধ্যমে যে কোন ভাষাকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা
যায়। গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন ভাষাকে আপনার মাতৃভাষায় অনুবাদ
করে অর্থ জেনে নিতে পারবেন।
২৮. Google Meet
গুগল মিট হচ্ছে জুম সফটওয়্যারের মত। গুগল মিট ব্যবহার করে আপনি একাধিক লোকের সাথে
ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবেন। বিশেষ করে ভার্চুয়াল মিটিং করার জন্য গুগল মিট
ব্যবহার করা হয়। গুগল মিট এর এন্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় এপ রয়েছে।
২৯. গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট হচ্ছে গুগল ভয়েস সার্চ এর একটি অংশ। কিন্তু গুগল
অ্যাসিস্ট্যান্ট বর্তমানে অনেক বুদ্ধিমান মানুষের মত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের
উত্তর সরাসরি খোজতে পারে এবং বলেও দিতে পারে। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরিতে গুগল
বেশি পরিমানে Artificial Technology ব্যবহার করেছে।
৩০. YouTube
ইউটিউব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে আপনি হয়তো জানেন কি না, ইউটিউব হচ্ছে
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন। অনলাইনে কোন কিছু সার্চ করার ক্ষেত্রে
গুগল এর পর ইউটিউবের অবস্থান। আর ইউটিউব হচ্ছে গুগলের একটি সার্ভিস। আপনি এখানে
আনলিমিটেড ভিডিও আপলোড করতে পারবেন।
গুগল কিভাবে টাকা ইনকাম করে?
আপনার মনে প্রায় সময় হয়তো প্রশ্ন জাগে যে, আমরা গুগলের অধিকাংশ সার্ভিস যেমন
Google Search, Gmail, YouTube, Google Drive সহ অন্যান্য সার্ভিস ব্যবহার করার
ক্ষেত্রে গুগলকে টাকা দিতে হয় না। তাহলে গুগল যদি আমাদের নিকট থেকে কোন চার্জ না
নেয় তবে গুগল কিভাবে এত মোটা অংকের ডলার ইনকাম করে? আপনার মনে এ রকম প্রশ্ন
জাগাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
আপনি শুনে অবাক হবেন যে, গুগল যত টাকা ইনকাম করে তার ৯৬% টাকা বিজ্ঞাপন থেকে
ইনকাম করে। এ কথা আমার নয়, স্বয়ং গুগল নিজেই বলেছে তাদের আয়ের বেশি ভাগ টাকাই
হচ্ছে বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জিত।
আপনি নিশ্চয় দেখে থাকেন যে, গুগলের মাধ্যমে আপনি যে সমস্ত ব্লগ ও ওয়েবসাইট ভিজিট
করেন তার অধিকাংশ ব্লগে আর্টিকেলের পাশে বিজ্ঞাপন শো হয়। এই বিজ্ঞাপন গুলো গুগল
বিভিন্ন কোম্পানির নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রচার করে থাকে।
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে বিলিয় বিলিয়ন মানুষ সার্চ করে। সেই জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলো
গুগলের কাছে বিজ্ঞাপন দিতে চায়। কারণ বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলো জানে যে, তারা যদি
গুগলের কাছে বিজ্ঞাপন জমা দেয় তাহলে মানুষ গুগলের অধীনে থাকা ব্লগের মাধ্যমে খুব
সহজে তাদের বিজ্ঞাপন দেখতে পাবে।
আর গুগল সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনার আমার ছোট বড় ব্লগে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে
কিছু টাকা আমাদেরকে প্রদান করে গুগল সেই সমস্ত কোম্পানির বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা
সুযোগ দিচ্ছে। যার ফলে এক দিকে যেমন গুগল বিজ্ঞাপনি সংস্থার নিকট থেকে মোটা অংকের
টাকা ইনকাম করছে অন্যদিকে আমাদের ব্লগে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার কারনে গুগল
আমাদেরকে কিছু টাকা দিচ্ছে। মোট কথা এভাবে গুগল আপনার আমার কাধে চড়ে বিজ্ঞাপনের
মাধ্যমে অধিকাংশ টাকা ইনকাম করছে।
কিভাবে গুগল বিজ্ঞাপন থেকে ইনকাম করে?
এতক্ষনে আপনি জানতে পেরেছেন যে, গুগল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেশির ভাগ টাকা ইনকাম
করে। কিন্তু আপনার কাছে একটা খটকা থেকেই যাবে যে, তাহলে গুগল সেই বিজ্ঞাপনগুলো
পায় কিভাবে? কারণ বাংলাদেশেত কোন গুগলের অফিস নেই। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ গুগলের
কাছে কিভাবে বিজ্ঞাপন দেয়। চিন্তার কোন কারণ নাই। আমি পুরো প্রসেসটি ব্যাখ্যা
করছি।
Google Ads/Adwords
Google Ads হচ্ছে গুগলের একটি অনলাইন বিজ্ঞাপনি টুলস। আপনি যদি অনলাইনের বিভিন্ন
ওয়েবসাইটে আপনার বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে আপনাকে গুগল একাউন্ট ব্যবহার করে প্রথমে
একটি গুগল এডওয়ার্ডস একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর আপনি যে বিজ্ঞাপন প্রচার
করতে চান সেই বিজ্ঞাপনের ব্যানার তৈরি করে গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে গুগলের কাছে
জমা দিতে হবে।
সাধারণত গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপন গুগলের কাছে জমা দেওয়াকে Google
Ads Campaign বলা হয়। এ ধরনের একটি ক্যাম্পেইন করার জন্য গুগলকে বিভিন্ন অংকের
টাকা পরিশোধ করতে হয়। সাধারণত টাকা পরিশোধের জন্য Visa Card, Master Card প্রয়োজন
হয়।
Google Ads Campaign কত দিন এবং কোন কোন কীওয়ার্ডের উপর পরিচালিত হবে সেটার উপর
নির্ভর করে আপনার বিজ্ঞাপন মূল্য গুগলকে পরিশোধ করতে হবে। কোন কাজের বিজ্ঞাপন
দেওয়ার জন্য গুগলকে কি পরিমানে টাকা পরিশোধ করতে হবে সেটাও গুগল এডওয়ার্ডস থেকে
জেনে নেওয়া যায়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, গুগলের কাছে বিজ্ঞাপন জমা দেওয়া হলো, সেটা
ঠিক আছে। কিন্তু গুগল আমার বিজ্ঞাপন অন্যের ওয়েবসাইট কিভাবে দেখাবে। অথবা বিশ্বের
অন্যান্য ব্লগ মালিকরা কেন আমার বিজ্ঞাপন তাদের ওয়েবসাইটে দেখাবে, কারণ কি?
Google AdSense
গুগল আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞাপনগুলো সরাসরি অন্যের ব্লগে ব্যবহার করতে
পারবে না। সে জন্য গুগল একটি নিয়ম করছে কেউ যদি আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞাপন
তাদের ব্লগে গুগল এডসেন্সর মাধ্যমে ব্যবহার করে তাহলে গুগলে তাদেরকে আপনার দেওয়া
টাকার কিছু অংশ ব্লগের মালিককে দেবে।
গুগলের সেই ভাগের টাকা পাওয়ার জন্য যাদের ব্লগ আছে তারা Google AdSense একাউন্ট
তৈরি করে গুগলের বিজ্ঞাপনে ব্লগে ব্যবহার করার জন্য আবেদন করে। তখন গুগল সেই
ব্লগটি যাচাই করে যোগ্য মনে করলে তখন ব্লগে বিজ্ঞাপন ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
তখন একজন ব্লগের মালিক গুগল এডসেন্স থেকে বিজ্ঞাপনের কোড নিয়ে ব্লগের বিভিন্ন
জায়গাতে বসায়। গুগল তখন তাদের নিকট থাকা বিজ্ঞাপনগুলো প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন
জায়গাতে শো করে। তখন যারা একটি ব্লগ ভিজিট করে সবাই আপনার বিজ্ঞাপনটি দেখতে পায়।
যার ফলে আপনার বিজ্ঞাপনটি ভোক্তা পর্যন্ত পৌছায়। অন্যদিক ব্লগের মালিক গুগলের
নিকট থেকে মাসিক ভিত্তিতে বিভিন্ন অংকের টাকা ইনকাম করে। অন্যদিকে গুগল আপনার
নিকট থেকে প্রাপ্ত টাকার বড় একটি অংশ রেখে দেয়। এভাবে মূলত গুগল বিজ্ঞাপনের
মাধ্যমে পুরো বিশ্ব থেকে টাকা ইনকাম করছে।
গুগল কিভাবে কাজ করে?
এত কিছু জানার পর আপনার মনে আরেকটি প্রশ্ন থাকতে পারে, আসলে গুগল কিভাবে কাজ বা
কিভাবে গুগল এত বিশাল পরিমানে তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। আসলে এ প্রশ্নটি যে কোন নতুন
ইন্টারনেট ব্যবহারকরীর মনে হতে পার। আমি যখন প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শিখি
তখন আমার মনেও এ ধরনের প্রশ্ন উধয় হয়েছিল।
আসলে গুগলের খুব বেশি পরিমানে নিজেস্ব তথ্য নাই। গুগল আপনার আমার মত কোটি কোটি
লোকের ওয়েবসাইট হতে তথ্য সংগ্রহ করে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট হতে তথ্য সংগ্রহ করার
ক্ষেত্রে গুগল এক ধরনের সফওয়্যার ব্যবহার কর। যেগুলোকে গুগল ’বট’ বা ’রোবট’ বলা
হয়।
এ ধরনের গুগল বটের কাজ হচ্ছে ইন্টারনেটে যত ব্লগ ও ওয়েবসাইট আছে প্রত্যেকটি
ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়ানো। এভাবে প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট ঘুরে ঘুরে প্রাপ্ত তথ্যগুলা
প্রথমে গুগল এর তথ্য ভান্ডারে জমা রাখে। তারপর সেই তথ্যের মধ্য হতে যে ব্লগের
কনটেন্ট ভালো হয় সেই ব্লগের পোস্ট গুগল সার্চ ইঞ্জিনের রেজল্ট পেজে শো করে। এভাবে
মূলত গুগল অন্যদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে ব্যবসা করছে।
শেষ কথা - গুগল কি?
আসলে গুগল হচ্ছে এমন একটি বৃহত্তম মাল্টিন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি যেটি
সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। তবে গুগল সম্পর্কে একজন ব্যক্তির যতটুকো জানার
প্রয়োজন তার সব তথ্য আমরা এখানে শেয়ার করে দিয়েছি।
আশাকরি গুগল কি সেই বিষয়ে আপনার এর থেকে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন হবে না। তারপরও
গুগল সম্পর্কে আপনার আরো তথ্যের প্রয়োজন হলে তা আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে
পারেন। সেই সাথে পোস্টটি ভালো লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করে অন্যদেরকে গুগল সম্পর্কে
জানাতে পারেন।
ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে আমার সাইটের পোস্ট কপি পেস্ট করে পোস্ট করে। যেমনঃ বিশ্ববিদ্যালয় সার্কুলার, এসাইনমেন্ট, রুটিন এগুলো বেশি করে। ফেসবুকে রিপোর্ট করে নামানোর কোন উপায় আছে কি?
সাধারণত একটি ব্লগ পোস্টের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ কপি করে ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। এটা খুব সিম্পল একটা বিষয়। এগুলো নিয়ে চিন্তা করার তেমন কিছু নেই।
তবে কেউ যদি আপনার পুরো পোস্ট কপি করে ফেসবুকে ব্যবহার করে এবং ফেসবুকের সেই পোস্ট গুগলে র্যাংক করে, তাহলে গুগলের কাছে আপনার পোস্টের রেফারেন্স দিয়ে কপিরাইট ক্লেইম করতে পারেন। গুগল ফেসবুকের সেই পোস্ট ডিলিট করতে পারবে না। তবে গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিন থেকে রিমুভ করে দিতে পারবে।
অসাধারন উপস্থাপন। সম্পূর্ণ পড়া শেষ না করে উঠতে পারলাম না। একটি বিষয় জানার ছিলো তাহলো- আপনার ব্লগের কমেন্ট ব্যতিত আমি যদি কোন বিষয় জানার জন্য আপনার কন্ট্রাক্ট ফরম পূরন করি তাহলে রিভিউ পাওয়া যাবে কি? মূলত অনেক বিষয় থাকে যা ব্লগের কমেন্টে করা যায় না। -ধন্যবাদ
আমরা সমসময় আমাদের পাঠকদের প্রশ্ন গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করি। আপনি যেকোন ভাবে আমাদের প্রশ্ন করতে পারেন।
ধন্যবাদ।
ভাইয়া ফন্ট সাইজের সাথে ওয়েবসাইট এর স্পিডের কোন রিলেশন আছে?
সাইটের ফন্ট কেমন রাখা উচিত এই রিলেটেড কোন পোস্ট আছে আপনার সাইটে?
ফন্ট সাইজ কোনো মেটার করে না। ফন্ট সাইজ যত রাখলে আপনার ব্লগে লেখা পরিষ্কারভাবে দেখা যায় ও পড়া যায়, আপনি সেই সাইজ ব্যবহার করবেন। এগুলো খুব ছোট বিষয়, পোস্ট করার মত কিছু নাই।
ধন্যবাদ...
ভাই আপনি কোন ফ্রন্টের মাধ্যমে ব্লগে লেখেন
SolaimanLipi ফন্ট। ওয়েব ফন্ট নিয়ে আমার ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট আছে। দেখতে পারেন, আশাকরি কাজে লাগবে।