ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ডাচ বাংলা ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাংক।
ব্যাংক ভিত্তিক লেনদেন করার জন্য অনেকে ডাচ বাংলা ব্যাংক-কে বেছে নিয়ে থাকেন। আর
যারা ডাচ বাংলা ব্যাংকের লেনদেন করতে চান তাদের আগে
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হয়। আজকের এই
আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনারা ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে করবেন এবং ডাচ বাংলা
ব্যাংক সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
আসলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ভালোমানের সার্ভিস এবং দ্রুততার সাথে কম সময়ে লেনদেন করা
যায় বলে সবাই ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট করতে চায়। তাছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের
একাউন্ট করার পিছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ। বাংলাদেশের শহর
থেকে শুরু করে গ্রামের প্রায় জায়গাতে বুথ পাওয়া যায় বিধায় সবাই ডাচ বাংলা ব্যাংকে
একটি একাউন্ট খুলতে চায়।
ডাচ বাংলা ব্যাংক কি?
ডাচ বাংলা ব্যাংক ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত করা
হয়। আর ডাচ বাংলা ব্যাংক আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৯৬ সালের দিকে। এটি গঠনের
লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক ভিত্তিক
বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া।
ব্যাংক সম্পর্কে জানতে পড়ুন—
অর্থাৎ ডাচ-বাংলা ব্যাংক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ তাদের জীবন মানের উন্নয়ন
ঘটাতে সক্ষম হয় সেই কারণেই এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ডাচ বাংলা ব্যাংক
তাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে খুলে বা ডাচ বাংলা একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এই
নিয়ে অনেকেই নানা ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাইলে অনেক ধরনের
অ্যাকাউন্ট করা যায়। আর যার যার প্রয়োজন অনুসারে এই সকল অ্যাকাউন্টগুলো করার
ধরনও অনেকটা ভিন্ন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার এবার আমি আপনাদেরকে বলব। ডাচ বাংলা ব্যাংকে
চাইলেন আপনারা বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট করতে পারবেন। যেমন—
- ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট
- ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট
- ডাচ বাংলা ব্যাংক স্যালারি একাউন্ট
- ডাচ বাংলা ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট
ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
যারা ডাচ বাংলা সেটিংস একাউন্ট করতে চান তারা চাইলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কিছু
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে খব সহজে সেভিংস একাউন্টটি করতে পারবেন। সেই সাথে আপনারা
ব্যাংকের প্রয়োজনীয় কিছু দিক নির্দেশনা ফলো করে খুব সহজেই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের
মাধ্যমে একটি সেভিংস একাউন্ট করে নিতে পারেন। ডাচ বাংলা সেভিংস একাউন্ট করতে যা
যা লাগবে তা নিচে দেওয়া হল—
- যে ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট করতে চাই তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
- যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি তাদেরকে দিতে হবে।
- ভোটার আইডি কার্ডের এক কপি ফটোকপি দিতে হবে।
- যাকে নমিনি করতে হবে তার আইডি কার্ডের এক কপি ফটোকপি এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
- রেফারেন্স হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের ফটোকপি এবং তার এক কপি ছবি দিতে হবে।
যদি কেউ ডাচ বাংলা ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট করতে চায় তাহলে উক্ত ডকুমেন্টগুলো
ব্যবহার করে খুব সহজেই সেভিংস একাউন্ট করা যাবে। তবে যার নামে ব্যাংক একাউন্ট
করতে চাইবেন তাকে অবশ্যই স্বশরীরে ব্যাংকে হাজির হতে হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জ
অনেকে ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট ইন্টারেস্ট এবং চার্জ সম্পর্কে জানতে
চান। ডাচ বাংলা ব্যাংক তাদের গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকার উপর ২
পার্সেন্ট চার্জ করে থাকে। অর্থাৎ আপনার একাউন্টে যদি ২ হাজার টাকা থেকে থাকে
তাহলে আপনার চার্জ কাটবে ২০০ টাকা বছরে। তাহলে বুঝতে পারছেন যে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে
আপনারা অনেক কম চার্জে টাকা জমাতে পারছেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্টের সুবিধা
কেউ যদি ডাচ বাংলা ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টে করে থাকেন তাহলে তারা বিভিন্ন ধরনের
সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে জমাকৃত টাকার উপর আপনারা অধিক বেশি
ইন্টারেস্ট গ্রহণ করতে পারবেন। তাছাড়া এই জমাকৃত টাকার ওপর ব্যাংক চার্জ অনেক
কম।
আর সাধারনত এই সকল অসাধারণ সুবিধাগুলোর কারণে অনেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে শুধুমাত্র
সেভিংস একাউন্ট করে থাকেন। তাছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট থেকে
আপনারা যখন খুশি তখন টাকা উইথড্র করতে পারবেন। তাছাড়াও ডাচ বাংলা সেভিংস একাউন্ট
তৈরি করার ফলে আপনি চেক ইস্যু করতে পারবেন। আপনারা ডাচ-বাংলার কোন শাখায় সরাসরি
যোগাযোগ করার মাধ্যমে ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে সেটাও জেনে
যাবেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
যারা ছাত্র রয়েছেন তারা চাইলেন ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুব সহজেই
খুলতে পারেন।নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র দেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই ডাচ বাংলা ব্যাংক
ছাত্র একাউন্ট খোলা সম্ভব।Duch Bangla Bank Student Account খোলার জন্য যা যা
প্রয়োজন—
- যে ব্যাক্তি একাউন্ট করবেন তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
- সর্বশেষ স্কুল-কলেজ, সার্টিফিকেট, অথবা ভর্তির ফরম বা বেতনের যেকোনো একটি সিট প্রয়োজন হবে।
- ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আপনার একজন নমিনীর প্রয়োজন হবে যার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং এককপি আইডেন্টি কার্ড এর ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- রেফারেন্স হিসাবে পূর্বে ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট ছিল এমন একজন ব্যক্তির সাহায্য আপনার প্রয়োজন হবে।ওই ব্যক্তির এক কপি এনআইডি কার্ড এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন হবে।
আপনারা এই উক্ত ডকুমেন্টগুলো নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই ডাচ বাংলা ব্যাংক
স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। আশাকরি ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট
খুলতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জেনে গিয়েছেন।
ডাচ বাংলা স্টুডেন্ট একাউন্ট চার্জ এবং ইন্টারেস্ট
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট চার্জ কত এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট
একাউন্ট ইন্টারেস্ট কত এর সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করেন। স্টুডেন্ট একাউন্টে কত
টাকা চার্জ নিয়ে থাকে এটা সরাসরি ডাচ-বাংলা শাখা থেকে আপনারা জেনে নিতে পারবেন।
স্টুডেন্ট একাউন্ট থেকে আপনারা প্রতিমাসের ২ লক্ষ টাকা ডাচ-বাংলা থেকে উইথড্র
নিতে পারবেন।
ডাচ বাংলা স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এর বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে তার জন্য অনেকেই
এখানে স্টুডেন্ট একাউন্ট করে থাকেন। নিচে ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এর
কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কে বলা হলো—
- ডাচ বাংলা স্টুডেন্ট একাউন্ট প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যুক্ত করা যাবে এবং ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উইথড্র করা যাবে।
- ডাচ-বাংলার যদি স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে তাহলে প্রতিদিন এখানে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পারবেন।
- ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে সর্বোচ্চ প্রতিদিন পাঁচবার টাকা তুলতে পারবেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট দেখার নিয়ম
যারা ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট করে থাকেন তারা অনেকেই ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট
চেক করতে চান। অর্থাৎ তারা ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স সরাসরি দেখতে
চান। যারা ডাচ বাংলা একাউন্ট নাম্বার জানতে চান তারা যখন একাউন্ট তৈরি করবেন তখনই
আপনাদেরকে বলে দেওয়া হবে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট দেখার নিয়ম গুলো হল—
- ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যালেন্স চেক
- এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বুথ হতে চেক
- সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে চেক
অর্থাৎ আপনারা এই তিন পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই ডাচ বাংলা ব্যাংক ব্যালেন্স
চেক করতে পারবেন। তাছাড়া *322# ডায়ল করে মোবাইল থেকেও ডাচ বাংলা
ব্যাংকের একাউন্ট চেক করে নিতে পারবেন। তাছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংক অনলাইন একাউন্ট
চেক করার জন্য অবশ্যই Nexas Pay এই অ্যাপটির প্রয়োজন হবে। আশাকরি ডাচ বাংলা
ব্যাংক একাউন্ট দেখার নিয়ম সম্পর্কে এতক্ষণ ছেড়ে দিয়েছেন।
শেষ কথা
ডাচ বাংলা ব্যাংক বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ব্যাংকিং খাত।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা খুব স্বাচ্ছন্দে এর মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে
পারেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট করলে আপনি অন্তত দ্রততার সাথে যেকোন ধরনের
লেনদেন করতে পারবেন।
আশা করি আজকের এই পোস্ট টি পড়ার মাধ্যমে ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সম্পর্কে এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন । তারপর
আর যদি কোন বিষয় সম্পর্কেও কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে কমেন্ট করে জানাবেন।