দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

নামাজের মধ্যে কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা আল্লাহর রহমত ও সাহায্য কামনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই একটি দোয়া হলো দোয়া কুনুত। এটি সাধারণত বিতর নামাজের শেষ রাকাতে পড়া হয়, যা নবীজী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন।

অনেকেই দোয়া কুনুত মুখস্থ করতে চান, তবে সঠিক উচ্চারণ ও অর্থ না জানার কারণে সমস্যায় পড়েন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা দোয়া কুনুতের বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও তাৎপর্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব, যাতে সহজেই এটি শেখা ও বুঝা যায়।

দোয়া কুনুত কি?

দোয়া কুনুত হলো এমন একটি বিশেষ দোয়া, যা বিতর নামাজের শেষ রাকাতে রুকুর পর কিয়াম অবস্থায় পড়া হয়। এই দোয়াতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত, পথনির্দেশনা এবং নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করা হয়। নবীজি (সা.) আমাদের এই দোয়াটি শিখিয়েছেন এবং সাহাবিরাও এটি নিয়মিত পাঠ করতেন।

দোয়া কুনুত

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্।

দোয়া কুনুত অর্থ

অর্থ: হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল, মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত, আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়?

দোয়া কুনুত বিতরের নামাজে পড়া হয়। বিতরের নামাজ সাধারণত এশার নামাজের পর পড়া হয়ে থাকে। বিতরের নামাজ ৩ রাকাত বিশিষ্ট। বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে দোয়া কুনুত পড়তে হয়। বিতরের নামাজ এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়।

বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মেলানোর পর তাকবিরে তাহরিমার মতো করে হাত উঠিয়ে তাকবির দিতে হয়। এরপর দোয়া কুনুত পড়তে হয়। দোয়া কুনুত মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এটি বিতরের নামাজে পড়া হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

দোয়া কুনুত পড়ার ফজিলত

দোয়া কুনুত শুধুমাত্র নামাজের অংশই নয়, বরং আল্লাহর রহমত, সাহায্য ও গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দোয়া। আসুন জেনে নিই, দোয়া কুনুত পড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত—

  • আল্লাহর নৈকট্য লাভ: এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয় এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এর ফলে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
  • ক্ষমা প্রার্থনা: দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এর ফলে বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং সে আল্লাহর রহমত লাভ করে।
  • বিপদ থেকে মুক্তি: দোয়া কুনুতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য চাওয়া হয়। এর ফলে আল্লাহ বান্দাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
  • শান্তি ও সমৃদ্ধি: নিয়মিত দোয়া কুনুত পাঠের মাধ্যমে বান্দার জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। মানব জীবনের অশান্তি দূর হয়।
  • গুনাহ মাফ: দোয়া কুনুতে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।
  • আল্লাহ্‌র রহমত লাভ: এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র কাছে রহমত চাওয়া হয়। তাই, এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বান্দার প্রতি রহমত দান করেন।
  • আত্মিক প্রশান্তি: দোয়া কুনুত পাঠের মাধ্যমে বান্দার মনে প্রশান্তি আসে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।

শেষ কথা

দোয়া কুনুত হলো এমন একটি দোয়া, যা মুমিনের অন্তরকে আল্লাহর দিকে আরো বেশি সংযুক্ত করে। এটি ক্ষমা, দয়া ও সাহায্য প্রার্থনার এক অনন্য মাধ্যম। যারা এখনো দোয়া কুনুত মুখস্থ করতে পারেননি, তারা সহজ বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ দেখে শিখতে পারেন।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা দোয়া কুনুতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, এই আলোচনা আপনাদের জীবনে উপকারী হবে। যদি আপনাদের আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সর্বদা প্রস্তুত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url